অনেক বাধা আছে থামবে না, অধ্যাপক ফরিদা জামান একুশে পদক ও সুলতান পদকপ্রাপ্ত
একজন জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত চিত্রশিল্পী। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ড্রয়িং
অ্যান্ড ইলাস্ট্রেশন বিভাগের সুপার নিউমেরোলজিক্যাল অধ্যাপক। তিনি ১৯৮৬ সালে চিত্রাঙ্কন ও
চিত্রায়ন বিভাগের ছাত্র থাকাকালীন হাবিবুর রহমানের শিশুতোষ উপন্যাস ‘বনমোরগের বাসা’ দিয়ে প্রচ্ছদ
শিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তার মতে, এ পেশায় বাধা আছে, হোঁচট খেতে হয়, আবার উঠতে হয়।
প্রচ্ছদ শিল্পে মেয়েদের চ্যালেঞ্জ এবং সেগুলি কাটিয়ে উঠতে কী করা দরকার সে বিষয়ে প্রথম আলোর
সঙ্গে কথা বলেছেন ফরিদা জামান। এছাড়া বর্তমান সময়ে নারী প্রচ্ছদ শিল্পীদের চ্যালেঞ্জের কথা জানতে প্রথম
আলো কথা বলেছেন দুই তরুণ প্রচ্ছদ শিল্পী শিখা ও সানজিদা স্বর্ণার সঙ্গে।স্কুলে পড়ার সময় মামা
বিখ্যাত চিত্রশিল্পী হাসেম খানের রাজধানীতে গিয়ে ছবি আঁকায় মুগ্ধ হন ফরিদা জামান।
আরও নতুন নিউস পেতে আমাদের সাইট:newstipo.com
অনেক বাধা আছে থামবে না
বাবা সালামত উল্লাহ ছিলেন ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্সের (এনএসআই) উপ-পরিচালক। বাবার চাকরির সুবাদে তারা রাজশাহীতে থাকতেন। হাশেম খান তার ভাতিজিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। ফরিদা জামান ১৯৮৯ সালে চারুকলায় ভর্তি পরীক্ষায় টিকে যান। তারপর ঢাকায় মামার বাড়ি থেকে ছয় মাস ক্লাস নেন।তখন চারুকলার শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো আবাসনের ব্যবস্থা ছিল না। আন্দোলনের মুখে তৎকালীন অধ্যক্ষ সৈয়দ শফিকুল হোসেন চারুকলার পেছনে একটি দোতলা ভবনের তিনটি কক্ষে শিক্ষার্থীদের থাকার অনুমতি দেন। ফরিদা জামান ছয়-সাতজন ছাত্রী নিয়ে নতুন হোস্টেলে চলে আসেন। তিনি বলেন, ‘ওই সময় ছাত্রদের ছবি আঁকার মাধ্যমে আয় করতে দেখেছি। আমরা দশ বোন, এক ভাই। ছেলেদের কাজ দেখে ভাবলাম, বাড়ি থেকে আর পড়ালেখার খরচ নেব না।
আমি নিজেই উপার্জন করব
তখন অবশ্য ছেলে হয়ে কাজ করার সুযোগ পাইনি। কিন্তু আমি অনুশীলন করতাম কিভাবে নিজেকে উপার্জনের জন্য দক্ষ করে তোলা যায়। হাঁটতে হাঁটতে মানুষের মুখের অভিব্যক্তি ধরার চেষ্টা করলাম। রাস্তায় হাঁটার সময়, সাইকেল চালানোর সময়, রিকশায় বসে মানুষের মুখের অভিব্যক্তি লক্ষ্য করতাম। চ্যালেঞ্জ গ্রহণের তাগিদ আসে উপার্জনের ইচ্ছা থেকে। ‘চ্যালেঞ্জ নেওয়ার তাগিদ থেকেই কঠিন লড়াইয়ে যোগ দেন ফরিদা জামান। তাঁর কথায়, “জীবন যুদ্ধ করে কাটানো হয়।”ফরিদা জামান জানান, ১৯৮২-৮৩ সালে তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চিত্রকর হিসেবে কাজ করেছেন। এর কিছুদিন পর তিনি টাইম ম্যাগাজিনের তিন থেকে চারটি প্রচ্ছদে কাজ করেন। ১৯৮৩ সালের শেষের দিকে পল্লী বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডে চিত্রশিল্পী হিসেবে নির্বাচিত হলেও তিনি যোগ দিতে পারেননি। সে সময় স্কলারশিপ নিয়ে মাস্টার্স করতে ভারতে যান।১৯৮৬ সালে মুক্তধারা থেকে প্রকাশিত ‘বনমর্গের বাসা’ বইটির প্রচ্ছদ ও অলংকরণ করেন ফরিদা জামান।
প্রথম প্রচ্ছদে কাজ করে বেশ আনন্দ পেয়েছেন
বলে জানান এই শিল্পী। প্রচ্ছদ শিল্পী হিসেবে তিনি শিশুদের বই নিয়ে অনেক কাজ করেছেন।ফরিদা জামান বলেন, “নারী হিসেবে আমি কাজ করতে গিয়ে অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছি। কিন্তু সেটা আমাকে আমার কাজ থেকে বিরত রাখতে পারেনি।’প্রচ্ছদে কাজ করায় অনেক সহশিল্পীর সমালোচনা শুনতে হয়েছে ফরিদা জামানকে। তিনি বলেন, ‘ওরা আমাকে বলত, এত ভালো আঁকি, আচ্ছাদন কেন? তারা ভেবেছিল এটা একটা সময় নষ্ট। আপনি প্রচ্ছদে আঁকা সময় দিতে পারেন না. কিন্তু এমন বাধা আমি কখনো অনুভব করিনি। এতে আমার আর্থিক চাহিদাও জড়িত ছিল। সমান্তরালে ছবি আঁকতাম, প্রচ্ছদও করতাম। হয়তো তারা না বুঝেই সমালোচনা করছিলেন।ফরিদা জামান মনে করেন, সাজসজ্জায় পারদর্শী হতে চাইলে ছবি আঁকা ভালোভাবে জানতে হবে। তার মতে, বইয়ের প্রচ্ছদ ও সাজসজ্জার জন্য ছবি আঁকার দক্ষতা থাকা জরুরি।ফরিদা জামান বলেন, ‘শিল্পী হাশেম খান ও রফিকুন নবীর ছবি আঁকায় অসাধারণ দক্ষতা রয়েছে।