জমি বিলীন রাস্তা হুমকির মুখে

জমি বিলীন রাস্তা হুমকির মুখে

জমি বিলীন রাস্তা হুমকির মুখে, তিন ফসলি জমিতে গম, মসুর, সর্ষেসহ সবজির চাষ হচ্ছে,

কলা চাষও হচ্ছে। কেউ পেয়ারা, লেবুর বাগান করেছেন। পদ্মার ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে সবুজে ঘেরা আবাদি

জমি।ছবিটি কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার বহলবাড়িয়া, তালবাড়িয়া ও পশ্চিম বাহিরচর ইউনিয়নের

কয়েকটি গ্রামের। পথ হারিয়েছেন শত শত কৃষক। এছাড়া কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী মহাসড়কের বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের

বেশ কয়েকটি খুঁটি ও জাতীয় গ্রিড ভেঙে পড়ার হুমকিতে রয়েছে।পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)

সূত্রে জানা গেছে, তালবাড়িয়া ও বহলবাড়িয়া ইউনিয়নের প্রায় ৯ কিলোমিটার এলাকা বিভিন্ন সময়ে পদ্মার ভাঙ্গন

হয়েছে। ২০১৬ সালে, সেখানে একটি স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য ৬০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেওয়া

হয়েছিল। সর্বশেষ ৯৯০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প। প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক)

পাস হয়নি, যে কারণে বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে না।

আরও নতুন নিউস পেতে আমাদের সাইট:newstipo.com

জমি বিলীন রাস্তা হুমকির মুখে

গত মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টায় সাহেবনগর এলাকায় গেলে রহিম বিশ্বাসকে চাদরে ঢাকা মাঠে দাঁড়িয়ে পদ্মার দিকে তাকাতে দেখা যায়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার পীরের (প্রায়) ৬০ বিঘা সম্পদ ছিল। কলা চাষ হয়েছিল ৯ বিঘা। সব জল শেষ। এখন আর মাথা ঝুলানোর জায়গা থাকবে না। মাঠ ভেঙ্গে ঝরে যাচ্ছে। পরিবার আলাদা হয়ে যাবে। ‘ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ভিড় করছেন রহিম বিশ্বাসের মতো গ্রামবাসীরা। তাকিয়ে থাকা ছাড়া তাদের কিছুই করার নেই।মাঠের পর সবুজ মাঠ। বিঘার পর বিঘা কলা রোপণ। কেউ খেতে গম, কেউ পেঁয়াজ বুনেছে। কামরুজ্জামান কাঁচা গম কেটে বাড়ি ফিরছিলেন। তিনি জানান, পদ্মার ভাঙনে গত এক মাসে তার ছয় বিঘা জমির মধ্যে পাঁচ বিঘা বিলীন হয়েছে। তার যতটা কাঁচা গম আছে সে কেটে নিয়ে গরুকে খাওয়াতে বাড়িতে নিয়ে যায়।কৃষক আরাফাত হোসেন জানান, ১৬ বিঘা জমিতে তার একটি বাগান রয়েছে। ১৬ বিঘা নদীতে চলে গেছে। গম ছিল ৮ বিঘা, আছে মাত্র ১০ কাঠা। মসুর ক্ষেতের অর্ধেকই শেষ হয়ে গেছে।

এখন পর্যন্ত ভাঙন রোধে কোনো ব্যবস্থা

নেওয়া হয়নি।নদীর পাড়ে চুপচাপ বসে আছেন কৃষক সুজা উদ্দিন। দুই মাস আগেও নদীটি বসতভিটা থেকে ৫শ মিটার দূরে ছিল। ভাঙা ভাঙা ঘরের কাছাকাছি আসছে। আর এক মাসে এ ধরনের ভাঙন ঘটলে বাড়িসহ মহাসড়ক ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।অগ্নুৎপাতের কারণ জানতে পাউবো কর্মকর্তা ও স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাদের সবার একই রকম মন্তব্য রয়েছে। তিনি বলেন, প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে পদ্মার ওপারে ঈশ্বরদীর রূপপুরে পদ্মা নদীর ভেতরে একটি বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে।ওই বাঁধে পানি বাধার কারণে নদীটি বহলবাড়িয়া ও তালবাড়িয়া এলাকার বিপরীত দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এ কারণে পানি এসে ঠেলে মাটি ভেঙ্গে যাচ্ছে। এ বছর ভাঙন তীব্র হয়েছে। পদ্মায় ভাঙনে কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী মহাসড়ক নিয়ন্ত্রণ না করা হলে নদীতে তলিয়ে যাবে। উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের ৩২টি জেলার মধ্যে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।তালবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান জানান, ভাঙন তীব্রতর হয়েছে।

প্রকল্পটি এখনই বাস্তবায়ন করা দরকার

প্রকল্পটি বাস্তবায়িত না হলে মহাসড়কসহ এলাকার সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো নদীগর্ভে চলে যাবে।কুষ্টিয়া পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আফছার উদ্দিন বলেন, নদীর গতিপথ ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। রূপপুরে ৩০০ মিটার নদী শাসনের কারণে নদীটি মিরপুরের তালবাড়িয়া ও বহলবাড়িয়ার দিকে যাচ্ছে।সাহেবনগর মাঠের ভেতর দিয়ে চলে গেছে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন। এর চারটি টাওয়ার ক্ষয়প্রাপ্ত এলাকা থেকে মাত্র দেড় শ মিটার দূরে মাঠের মধ্যে পড়ে গেছে। গত শুক্রবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ন্যাশনাল গ্রিডের কর্মকর্তারা।কুষ্টিয়ার বটতৈল জাতীয় গ্রিডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সাহেবনগর এলাকায় চারটি টাওয়ার হুমকির মুখে রয়েছে। এই লাইন দিয়ে রাজবাড়ীতে বিদ্যুৎ পরিবাহিত হয়। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে জানানো হয়েছে।কুষ্টিয়া পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আফছার উদ্দিন জানান, ক্ষতিগ্রস্ত ৯ কিলোমিটারের অবস্থা খুবই খারাপ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *