তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজনীয়তা মানে সিইসি, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে।
আর বরাবরের মতো এবারও স্পটলাইটে রয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)। কমিশনের কাজে যে
কোনো সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে সিইসির ভোট সব কমিশনারের সমান হলেও যেহেতু তিনি কমিশনারদের
সভায় সভাপতিত্ব করেন এবং কমিশন সচিবালয় তার অধীনে থাকে, তাই তার একটি বড় ভূমিকা রয়েছে।
খেলা বাংলাদেশের চিরাচরিত প্রথা অনুযায়ী, সিইসি-ই আসলে নির্বাচন কমিশনের চরিত্র নির্ধারণ করেন।
বিসিএস ১৯৭১ ব্যাচের একজন কর্মকর্তা সিইসি মুনসেফ (সহকারী জজ) হিসেবে সরকারি চাকরি শুরু করেন।
জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর তিনি আইন মন্ত্রণালয়ে যুগ্ম সচিব হিসেবে নিয়োগ পান।
এরপর ধাপে ধাপে একই মন্ত্রণালয়ের সচিব হন তিনি। পরে তিনি ধর্ম মন্ত্রণালয়, সংসদ সচিবালয় ও প্রতিরক্ষা
মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
আরও নতুন নিউস পেতে আমাদের সাইট:newstipo.com
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজনীয়তা মানে সিইসি
উল্লেখ্য, নিয়োগের সময় নীতিমালা অনুসরণ না করায় ২০১০ সালে আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে হাবিবুল আউয়ালের নিয়োগ অবৈধ ঘোষণা করেন আদালত।আমি নবনিযুক্ত সিইসিকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। তার অজান্তেই তিনি প্রমাণ করেছেন দেশে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের প্রয়োজনীয়তা। এটা আর কোনো তাত্ত্বিক আলোচনার পর্যায়ে নেই। নানা অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে, নানা দ্বন্দ্ব-সংঘাতের মধ্য দিয়ে এদেশের নাগরিকরা জানে, এদেশে একটি ক্ষমতাসীন সরকার কখনোই নির্বাচন কমিশনকে কোনোভাবে সাহায্য করে না।শুধু তাই নয়, আইন সচিব থাকাকালে দুই বিচারপতিকে অবৈধভাবে অবসর নেওয়ার জটিলতায়ও জড়িয়ে পড়েন হাবিবুল আউয়াল। এ জন্য সংসদীয় কমিটি তাকে তলব করলে তিনি এ ঘটনার জন্য ক্ষমাও চান। এসবই এখন পর্যন্ত গণমাধ্যমে প্রকাশিত তার চাকরির অনিয়ম। সব মিলিয়ে চাকরিতে এই অনিয়ম তার কমিশনার হওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ানোর কথা ছিল। কিন্তু আরও বড় সমস্যা আছে।
২০১৫ সালের জানুয়ারিতে হাবিবুল আউয়ালের
অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সরকার পিআরএল বাতিল করে তাকে এক বছরের চুক্তিতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হিসেবে নিয়োগ দেয়। ২০১৬ সালে চুক্তিটি আরও এক বছরের জন্য বাড়ানো হয়েছিল। তারপর তিনি ২০১৬ সালে সিনিয়র সচিব হিসাবে মন্ত্রণালয় থেকে অবসর গ্রহণ করেন। কোনো সরকারি কর্মকর্তা অপরিহার্য নয়। কর্মকর্তাদের যেভাবে ধাপে ধাপে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, তাতে একজন অবসরে যাওয়ার পর দায়িত্বটা ভালোভাবে নিতে পারেন। সুতরাং যখন কাউকে চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়, তখন সেই ব্যক্তির বিকল্প নেই বলে নয়। শুধুমাত্র সচেতন মানুষই জানেন যে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ সরকারকে প্রয়োজনীয় সেবা প্রদানের পুরস্কার হিসেবে সরকারের (রাষ্ট্র নয়) খুব কাছের লোক দিয়ে থাকে।যে ব্যক্তি সরকারে অনেক বেশি সুবিধাপ্রাপ্ত তিনি নির্বাচন কমিশনার হিসেবে অযোগ্য। সিইসি হওয়ার প্রশ্নই আসে না।
প্রাথমিক বাছাইয়ে এমন সুবিধাভোগীদের বাদ
দেওয়ার কথা ছিল সরকারের। তবে যা-ই হোক না কেন, আমরা বুঝতে পারি যে নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে এত হট্টগোলের মধ্যেও সরকার এমন একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করেনি যা অন্তত একটি ‘ইওয়াশ’ দেবে তবে অন্তত বিতর্ক বা অন্তত বিতর্ক কম করবে। .তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কে নির্বাচন কমিশনার হওয়া উচিত, আর কাকে করা উচিত নয়, সে আলোচনা খুবই অর্থহীন। মজার ব্যাপার হলো, আমরা যে অর্থহীন বলছি সেটা খোদ সিইসির মুখ থেকেই বেরিয়ে এসেছে। দেশের নির্বাচনী সরকারের চরিত্র নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে আওয়াজ উঠলে সরকার জবাব দেয় যে নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন সংস্থা এবং তাদের অধীনেই নির্বাচন হবে। আমরা প্রতিনিয়ত এটাও শুনি যে, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন প্রশাসন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে আছে, তাই তারা যেকোনো কিছু করতে পারে।অন্যদিকে দলীয় সরকারের অধীনে কাজ করতে গিয়ে কী ধরনের বাধার সম্মুখীন হতে হয় তার সাম্প্রতিকতম উদাহরণ নবগঠিত নুরুল হুদা কমিশন।