সেই বাচ্চারা কখনই জিজ্ঞেস করে না আমি কেমন আছি

সেই বাচ্চারা কখনই জিজ্ঞেস করে না আমি কেমন আছি

সেই বাচ্চারা কখনই জিজ্ঞেস করে না আমি কেমন আছি, ৬০ বছর বয়সী মোঃ সাজেদুল।

বয়সের ভারে অনেকটাই নুব্জা। আয়ের একমাত্র উৎস ছিল ঘোড়ার গাড়ি। সাম্প্রতিক বাসের ধাক্কায় ঘোড়ার একটি

পা কেটে গেছে। সে তার আয়ের একমাত্র উৎস হারিয়ে এখন হারিয়ে গেছে। বৃদ্ধা স্ত্রীর সাথে অর্ধাহারে

দিন কাটে তার। দম্পতির তিনটি ছেলে রয়েছে। কেউ তাদের খবর রাখে না।সাজেদুলের বাড়ি জামালপুর শহরের ছনকান্দা

এলাকায়। স্ত্রী মেহেরুন বেগম। সাজেদুল তাদের সন্তানদের নাম জানতে চাননি। সন্তানদের প্রতি তার

দুঃখ-বেদনা। এত পরিশ্রম করে ছেলেমেয়েদের মানুষ করে লাভ কী? দম্পতি কোনো সরকারি ভাতা পান

না।ঘটনাস্থলে দেখা যায়, সাজেদুল বাড়ির পাশের একটি বাগানে আহত ঘোড়ার বিচ্ছিন্ন পায়ে ওষুধ দিচ্ছেন।

ঘোড়াটি তিন পা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তবে পা কাটার যন্ত্রণায় ঘোড়াটা ঝাঁকুনি দিচ্ছিল। ঘোড়ার রোজগারের একমাত্র

উপায় জানতে চাইলে কান্নায় ভেঙে পড়ে সাজেদুল।

আরও নতুন নিউস পেতে আমাদের সাইট:newstipo.com

সেই বাচ্চারা কখনই জিজ্ঞেস করে না আমি কেমন আছি

সাজেদুল জানান, তার ঘোড়া প্যারালাইজড হয়ে এক মাস ধরে বেকার রয়েছেন। স্ত্রীর সাথে প্রায়ই খেতে হচ্ছে।

বয়সের কারণে অন্য কোনো চাকরি পান না। তার ৩ শতাংশ জমি ছিল। দুই বছর আগে শিশুরা ওই

জমিও লিখে দেয়।বৃদ্ধ নারী-পুরুষ একটি কুঁড়েঘরে থাকেন। ছোট বাড়ির পূর্ব দিকের অংশ ভেঙে

পড়েছে। ঘরের বেড়াও ভেঙে গেছে। বৃষ্টিতে পুরো বাড়ি প্লাবিত হয়েছে। ঘরটা ঝলমল করছে।

বাচ্চারা পাশে থাকে, বৃদ্ধ বাবা-মায়ের দিকে ফিরে তাকায় না।এলাকাবাসী জানায়, এক সময় সাজেদুলের অবস্থা বেশ

ভালো ছিল। তিন সন্তান নিয়ে ভালোই চলছে সে। ছেলেমেয়েদের বিয়ের পর পরিস্থিতি পাল্টে যায়।

দুই সন্তান বাড়িতে থাকে। আরেকজন থাকেন শ্বশুর বাড়িতে। এই বাবা-মাকে কেউ দেখে না।সাজেদুলের স্ত্রী মেহেরুন

বেগমের বয়স ৬০ বছর। বয়সের ভারে ও বিভিন্ন অসুখে হাঁটাচলা ও কাজ করতে পারে না। প্রায় ৯ মাস আগে মেহেরুন বেগমের ডান হাত ভেঙে যায়। চিকিৎসার অভাবে এখনো হাত ভেঙে গেছে।

ওই হাত দিয়ে আপনি কিছু করতে

পারবেন না।মেহেরুন আক্ষেপ করে বলেন, “এই পৃথিবীতে আমি অনেক কষ্ট করেছি। নিজে না খেয়ে বাচ্চাদের খাবার দিয়েছি। লালন-পালন করেছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, আজ সেই শিশুরা কখনো জিজ্ঞেস করে না আমি কেমন আছি। তারা রান্না করে খায়। ,আমরা খেয়েছি কিনা জিজ্ঞেসও করিনি।বাচ্চারা মানুষ করে কি লাভ।বুড়ো বয়সে ঘোড়ার গাড়িতে করে কোনো না কোনোভাবে কিছু টাকা পেতো।তা দিয়ে আমরা দুজন কোনোমতে হাঁটতে পারতাম।সেটাও বন্ধ।আমাদের মতো মানুষ। বেশি ঝুঁকিতে আছে। ঈশ্বর আমাদের আরও পরীক্ষা করেন।’স্ত্রীর কথার পর সাজেদুল বলেন, “আমি একসময় দোকানে কাজ করতাম। বয়সের কারণে এখন কেউ কাজ করে না। তিন হাজার টাকায় একটি ঘোড়া বাচ্চা কিনেছি। সে বড় হলে ঘোড়ার গাড়ি তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করি। প্রতিদিন ১০০ থেকে ২০০ টাকার বেশি রোজগার করতে পারতাম না।শরীরটাও তেমন ভালো না।

তারপরও ওদের দুজনকে খাওয়াতে

প্রতিদিন বাইরে যেতাম।’সাজেদুল জানান, গত মাসে বাসের ধাক্কায় ঘোড়ার বাম পা ভেঙে যায়।টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারেননি। ফলে প্রাণিসম্পদ অফিসের লোকজন সুলতান আলম নামের স্থানীয় বাসিন্দার সহায়তায় চিকিৎসা নেন। একটি পা কেটে ফেলুন। আবার এক পা দিয়ে ঘোড়ার গাড়ি চালানো সম্ভব নয়। ফলে তার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। উপাদান সম্পর্কে আর কিছু বলার নেই।বসার ঘর দেখিয়ে সাজেদুল বলেন, “বাড়ির অবস্থা ভালো না। পুরো বাড়ি ভাঙা। আগামী বর্ষায় ভেঙে যেতে পারে। তখন কোথায় থাকব? তার বয়স কত, কেউ কোনো ভাতা দেয়নি। আমিও গিয়েছিলাম। মেম্বারকে।কখনো কিছু পাইনি।সবচেয়ে বড় আফসোস হল সারাজীবন কষ্ট সহ্য করেছি।মানুষ কেন কষ্ট করে?কোন লাভ দেখি না।এই বয়সেও দুমুঠো ভাতের জন্য কষ্ট করতে হয়।এখন পুরো পথ বন্ধ। আমরা দিনে একবার খাই, হয়তো দিনে দুবার, দিনে ও রাতে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *