প্রধানমন্ত্রীর উপর যখন বিশ্বাস

প্রধানমন্ত্রীর উপর যখন বিশ্বাস

বিভাগীয় খবর

প্রধানমন্ত্রীর উপর যখন বিশ্বাস, অবশেষে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার চেয়েছেন শরীফ উদ্দিন।

একসময় ভালো কর্মকর্তা হিসেবে বিবেচিত এই দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) চাকরি হারিয়েছেন।

চাকরি হারানো সত্ত্বেও কমিশন তার বিরুদ্ধে ত্রিমুখী তদন্ত অব্যাহত রেখেছে। এমন একটি মামলায় হাজির হয়ে

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দুর্নীতিবিরোধী রূপকল্প বাস্তবায়নে প্রভাবশালীদের ওপর ক্ষুব্ধ তিনি। সহকর্মী ও

জনগণের দোয়া, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ মনোযোগের সুবাদে তিনি নিখোঁজ হওয়া থেকে বেঁচে গেছেন।

শরীফ তার বিরুদ্ধে অবিচার প্রতিরোধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তার সবচেয়ে বড় আশা হিসেবে দেখেন।

এই অন্যায় প্রতিরোধে দেশে আইন আছে, উচ্চতর কর্তৃপক্ষ আছে, প্রশাসনিক আদালত আছে,

উচ্চ আদালত আছে। তবে তাকে প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করতে হবে।

আরও নতুন নিউস পেতে আমাদের সাইট:newstipo.com

প্রধানমন্ত্রীর উপর যখন বিশ্বাস

শরীফের বক্তব্য হয়তো প্রধানমন্ত্রীকে গর্বিত করেছে; কিন্তু একই সঙ্গে কেন তিনি দেশের আদালত বা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের ওপর ভরসা রাখতে পারছেন না, সেই প্রশ্নও ওঠে। শুধু প্রভাবশালীদের গুম ঠেকাতে প্রধানমন্ত্রীর ভিশন কেন কার্যকর বলে বিবেচিত হবে? নাগরিকদের মধ্যে এমন ধারণা তৈরি হবে কেন? দেশে আইনের শাসন বা মানবাধিকার কোথায়?শরীফ উদ্দিনের এই বক্তব্য বিচ্ছিন্ন কিছু নয়। অতীতে আমরা অনেকবার দেখেছি প্রধানমন্ত্রীকে শেষ বা একমাত্র আশা হিসেবে আবেদন করতে। এখানে গত বছরের কিছু উদাহরণ আছে। গত বছরের জুনে তার অসহায় স্ত্রী নিখোঁজ ইসলামী বক্তা আবু ত্বওয়া-হারকে খুঁজে বের করার জন্য শেষ উপায় হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেন।গত জুন মাসে প্রধানমন্ত্রীকে মা বলে সম্বোধন করে পুলিশ ও র‌্যাবের কাছে বিচার দাবি করেন অভিনেত্রী পরীমনি। জুলাই মাসে পাবনার ঈশ্বরদীর এক মুক্তিযোদ্ধা চিকিৎসা ব্যয়ের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে শেষ ভরসা বলে উল্লেখ করেন।

আগস্টে সত্তর দশকের এক ব্যক্তি

বার্ধক্য ভাতার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে যান। অক্টোবরে যশোরের ভবদহ এলাকায় জলাবদ্ধতা রোধে ‘সাধারণ মানুষের শেষ ভরসা’ হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়।এর আগে ২০২০ সালের মার্চ মাসে করোনার সময় শ্রমিকদের মজুরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিজিএমইএ সভাপতি সবাইকে প্রধানমন্ত্রীর ওপর নির্ভর করার আহ্বান জানান। জুন মাসে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক করোনা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করতে প্রধানমন্ত্রীকে আহ্বান জানান। কয়েক বছর আগে, অভিনেত্রী অপু বিশ্বাস তার বিবাহবিচ্ছেদ সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে প্রধানমন্ত্রীকে তার শেষ আশা হিসাবে উল্লেখ করেছিলেন।আমি বিভিন্ন কারণে বহু বছর ধরে ইউরোপ-আমেরিকাতে আছি। সারাজীবন দেশ-বিদেশের খবর নিজের স্বার্থে রেখেছি। এমন খবর আমি আর কোথাও দেখেছি বলে মনে হয় না। এটা কি সুশাসনের লক্ষণ নাকি অন্য কিছু?প্রধানমন্ত্রী একা জনগণের আস্থার পাত্র হতে পারেন না।

তিনি ট্রাস্ট সিস্টেমের প্রধান

এই ব্যবস্থার অংশ মন্ত্রিপরিষদ, সরকারী প্রশাসন, পুলিশ-গোয়েন্দা এবং বিচার বিভাগ। এখানে যারা আছেন, তাদের বেতন, তাদের বাড়ি, তাদের গাড়ি, তাদের সন্তানের ভবিষ্যৎ—সবকিছুই জনগণের ট্যাক্সের টাকায়। সংবিধান বলছে তারা সবাই জনগণের সেবক।বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি। তার ক্ষমতা অন্য অনেক প্রধানমন্ত্রীর চেয়ে বেশি। যেমন, ভারতে রাষ্ট্রপতিকে মন্ত্রিসভার পরামর্শ মেনে চলতে হয়, বাংলাদেশে শুধু প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ।সে কারণে মধ্যযুগের রাজাদের মতো নিরঙ্কুশ ক্ষমতা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর নেই। রাজকোষ, ধর্মশালা, সেনাবাহিনী—সবই ছিল তাদের নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণে। তারা শাসন করেছে, আইন করেছে এবং তাদের খুশি মতো বিচার করেছে। সাধারণ মানুষ এমন রাজাদের দরবারে মুহূর্তের মধ্যে প্রতিকার বা কৃপা পাওয়ার আশা করতে পারত। কিন্তু রাজতন্ত্রের আর সেই ক্ষমতা নেই।বাংলাদেশ রাজতন্ত্র নয়।

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *